থ্রি-কোর্স মিল – খাবার খাওয়ারও একধরনের সিনেমা!

 বাংলাদেশি এক ভাই আমার মতই আয়ারল্যান্ড থাকে। কিছুদিন আগে দেশে গিয়ে ঘুরে আসলো। সেদিন তার সাথে দেখা। দেখা হতেই দেশের গল্প। গল্পে গল্পে বলছে দেশে কোথায় কোথায় দাওয়াত খেলো, কি কি খাওয়া হলো। যেখানেই যায় শুরুই করে হালকা চা নাস্তা দিয়ে (স্টারটার বা এপিটাইজার) তারপর আসে পোলাও, রোস্ট, রেজালা সব ভারি ভারি খাবার ( মেইন কোর্স) এরপরে দেয়া হয় দই মিষ্টি (ডেজারট বা ফাইনাল কোর্স) বিষয়টা কি ভেবে দেখেছেন, আমাদের দেশীয় কালচারে আতীথেয়তায় যেভাবে আপ্যায়ন করে তা কালিনারী দুনিয়ায় থ্রি কোর্স মিল নামে পরিচিত। আসেন আজকে আপনাদের এই থ্রি কোর্স মিল নিয়ে কিছু বলি। যদিও ডিটেইলে বলাটা মুশকিল। তবে চেষ্টা করবো সহজে বুঝানোর। আর হ্যা, আসছে আমার বইয়ে কিন্তু বিস্তারিত দেয়া হচ্ছে।


একটা গোছানো খাবারের অভিজ্ঞতা অনেকটা সিনেমা দেখার মতো। শুরুটা হয় হালকা আলো-আঁধারিতে, মাঝখানে নাটকীয় মোড়, আর শেষটা এমনভাবে শেষ হয় যেন দর্শক মুগ্ধ হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে। খাবারেও ঠিক তেমনই তিনটি ধাপ থাকে—স্টার্টার, মেইন কোর্স, আর ডেজার্ট। আসুন, একটু গভীরে যাই।

🎬 সিন ১: স্টার্টার / অ্যাপেটাইজার – খাবারের ট্রেইলার

এটি মূলত একধরনের ভূমিকা। ক্ষুধাকে উস্কে দেওয়ার জন্য, রুচি জাগানোর জন্য পরিবেশন করা হয় কিছু হালকা খাবার। এতে পেট পুরোপুরি ভরে না, তবে মন চাঙা হয়ে ওঠে মূল খাবারের অপেক্ষায়।

উদাহরণ:

  • চিকেন স্যুপ

  • টমেটো ব্রুশেটা

  • সালাদ

  • গার্লিক ব্রেড

বাংলাদেশি সংস্কৃতিতে আমরা এখানে চা, বискুট, কিংবা হালকা সিঙ্গারা, পেঁয়াজু দিয়েই অতিথিকে প্রথমত স্বাগত জানাই।

🎬 সিন ২: মেইন কোর্স – আসল সিনেমার হিরো

এটাই হলো খাবারের মূল অংশ—যেখানে পেটও ভরে, তৃপ্তিও আসে। এর গঠন, বৈচিত্র্য এবং স্বাদ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

উদাহরণ:

  • বিরিয়ানি, রোস্ট, রেজালা

  • গ্রিলড চিকেন উইথ মাস্টার্ড ম্যাশ

  • পাস্তা বা লেজানিয়া

  • মাছ ভাজি, ডাল, ভাত

বাংলাদেশি আতিথেয়তায় এই অংশটাই সবচেয়ে সমৃদ্ধ। একেক বাড়িতে একেক স্বাদে, তবে আতিথেয়তার প্রাণ এই জায়গাতেই।

🎬 সিন ৩: ডেজার্ট – খাবারের ক্লাইম্যাক্স

যে সিনেমা দর্শকের মনে থেকে যায়, তার ক্লাইম্যাক্সই সবচেয়ে স্মরণীয় হয়। ঠিক তেমনি, খাবারের এই শেষ অংশটা হলো স্মৃতি গেঁথে দেওয়ার মুহূর্ত। হালকা মিষ্টি কিছু মুখে দিলেই পুরো অভিজ্ঞতাটাই সুন্দরভাবে শেষ হয়।

উদাহরণ:

  • পুডিং

  • চকলেট কেক

  • আইসক্রিম

  • বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে: মিষ্টি দই, রসমালাই, সন্দেশ


তাহলে থ্রি-কোর্স মিল মানে?

একটা গোছানো, পরিকল্পিত খাবার অভিজ্ঞতা।
শুরুতে হালকা স্বাদে রুচি জাগানো,
মাঝে ভারী ও তৃপ্তিদায়ক খাওয়া,
আর শেষে মিষ্টি দিয়ে মনের প্রশান্তি।

শুধু পেট ভরানোর জন্য নয়,
এই অভিজ্ঞতা হলো—
"খাবারের এক রকমের গল্প, এক রকমের যাত্রা!"

শেষ কথাঃ

আমাদের দেশীয় খাবার সংস্কৃতিতেই আসলে বহু আগে থেকেই থ্রি-কোর্স মিলের ছায়া ছিল। আমরা হয়তো তাকে সে নামে ডাকিনি, কিন্তু আমাদের আতিথেয়তার হৃদয়েই এর রূপ লুকিয়ে ছিল। খাবার শুধু প্রয়োজন নয়—এটা একধরনের আর্ট, অনুভব, ও সম্পর্কের প্রকাশ।

আপনার আসন্ন বইয়ে এ নিয়ে বিস্তারিত থাকছে শুনে ভালো লাগলো। আশা করি পাঠকেরাও এই রসাল বিষয়টি আরও গভীরভাবে উপভোগ করতে পারবে।


Chef Jahed

https://web.facebook.com/ChefJahed.bd

Post a Comment

Previous Post Next Post