হোম রেসিপি ও প্রফেশনাল রান্না: দুটি স্বাদের গল্প"
ছোটবেলায় যখন বাসায় রান্না হতো, আমি সবসময় কৌতূহলী হয়ে মায়ের পাশে দাঁড়াতাম। মা রান্না করতে করতে বলতেন—“লবণটা একটু স্বাদমতো দাও, ঝাল কম লাগলে মরিচ গুঁড়া বাড়িয়ে দিও।” তখন মনে হতো, রান্না আসলে এক ধরনের খেলা। তুমি নিজের মতো করে বানাতে পারো, মশলা এদিক-ওদিক করতে পারো, তবুও খাওয়া শেষে সবাই খুশি হয়। এটিই হলো হোম রেসিপি—স্বাদ, আরাম আর পরিবারের ভালোবাসা দিয়ে বানানো খাবার।
কিন্তু প্রথমবার যখন প্রফেশনাল কিচেনে ঢুকলাম, তখন বুঝলাম রান্নার একেবারে আলাদা এক জগৎ আছে। এখানে কোনো “স্বাদমতো” নেই, কোনো “এক মুঠো” নেই। বরং শেফ বললেন—“লবণ হবে ঠিক ১২ গ্রাম, স্টক ফুটবে ঠিক ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, আর চিকেন রান্না হবে ১৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ড।” মনে হলো আমি যেন রান্নাঘরে নয়, ল্যাবরেটরিতে দাঁড়িয়ে আছি। প্রতিটি পদ একই রকম দেখতে হবে, একই রকম স্বাদ হবে—যেন দশবার করলে দশবারই ফলাফল এক। এটিই হলো প্রফেশনাল রেসিপি—স্ট্যান্ডার্ডাইজড, নিখুঁত, আর বিজ্ঞানসম্মত।হোম রেসিপিতে একটা স্বাধীনতা থাকে—আজ পেঁয়াজ কম, কাল আলু বেশি, তবুও চলে। কিন্তু প্রফেশনাল কিচেনে সেই সুযোগ নেই। কারণ এখানে একটা ডিশ শুধু খাওয়ার জিনিস না, বরং সেটি হলো ব্র্যান্ড, রেস্টুরেন্টের পরিচয়।
আজও যখন আমি মায়ের রান্না খাই, তখন স্বাদে সেই আরামের ছোঁয়া পাই—যেখানে মাপজোখের হিসেব নেই, আছে শুধু ভালোবাসা। আর যখন প্রফেশনাল কিচেনে দাঁড়িয়ে থাকি, তখন মনে হয় আমি এক শৃঙ্খলার মধ্যে কাজ করছি—যেখানে প্রতিটি পদ নিখুঁত হতে হবে, কারণ একজন অতিথি সেটির জন্য টাকা দিচ্ছে আর প্রত্যাশা করছে প্রতিবার একই অভিজ্ঞতা।
দুটি জগত আলাদা হলেও, দুটোই দরকারি।
একটা আমাদের দেয় উষ্ণতা, অন্যটা শেখায় শৃঙ্খলা।
একটা হলো ঘরের গল্প, অন্যটা হলো পেশার পাঠ।
Tags:
Culinary Art in BanglA