ঘরেই দইয়ের বীজ তৈরি | ৪টি সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি

দই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অত্যন্ত পরিচিত এবং উপকারী খাবার। এটি শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, বরং হজম শক্তি বাড়ানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোবায়োটিক সরবরাহেও সহায়ক।

অনেকেই ঘরে দই জমাতে চান, কিন্তু প্রথমবারের মতো দইয়ের বীজ না থাকলে সেটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বাজার থেকে দই কিনে বীজ হিসেবে ব্যবহার করা যায় ঠিকই, কিন্তু সেটা সব সময় কার্যকর নাও হতে পারে। তাই আজকে আমরা শিখব কীভাবে খুব সহজে, চারটি ভিন্ন প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরেই দইয়ের বীজ তৈরি করা যায়।



ঘরেই দইয়ের বীজ তৈরি প্রাথমিক প্রস্তুতি :

উপকরণ

  • ১ কাপ গুঁড়া দুধ

  • ১ কাপ পানি

  • ২ চা চামচ লেবুর রস

  • ২–৩ চা চামচ তেঁতুলগোলা

  • ১ চা চামচ ভিনেগার

  • ৩টি শুকনো মরিচ (বোটা সহ)

প্রথমে গুঁড়া দুধ এবং পানি ভালোভাবে মিশিয়ে একটি ফুটে উঠা পর্যন্ত গরম করুন। এরপর দুধটি হালকা গরম অবস্থায় নামিয়ে নিন। এমন গরম থাকতে হবে যাতে আঙুল ডুবালে সহ্য হয় — বেশি গরম হলে ছানা হয়ে যেতে পারে, আর বেশি ঠান্ডা হলে ফারমেন্ট হবে না।

এবার নিচের যেকোনো একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে বীজ তৈরি করতে পারেন।

প্রথম পদ্ধতি: লেবুর রস দিয়ে দইয়ের বীজ

পদ্ধতি

  • হাফ কাপ হালকা গরম দুধ একটি পরিষ্কার বাটিতে নিন।

  • এর মধ্যে ২ চা চামচ লেবুর রস দিন।

  • নাড়ানোর দরকার নেই।

  • বাটিটি ঢেকে রাখুন এবং ৮–১০ ঘণ্টা বা সারা রাত রেখে দিন।

কেন কাজ করে?
লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড দুধে থাকা প্রোটিনকে ভেঙে ব্যাকটেরিয়া গঠনে সহায়তা করে, যা বীজ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়।

দ্বিতীয় পদ্ধতি: তেঁতুলগোলা দিয়ে বীজ তৈরি

পদ্ধতি

  • হালকা গরম হাফ কাপ দুধে ২–৩ চা চামচ ঘন তেঁতুলগোলা দিন।

  • নাড়ানোর দরকার নেই।

  • ঢেকে সারা রাত রেখে দিন।

কেন কাজ করে?
তেঁতুলের প্রাকৃতিক টক স্বাদ এবং অ্যাসিডিক বৈশিষ্ট্য দুধে ফারমেন্টেশন ঘটায়, ফলে বীজ তৈরি হয়।

তৃতীয় পদ্ধতি: শুকনা মরিচ দিয়ে দইয়ের বীজ

পদ্ধতি

  • হাফ কাপ দুধে ৩টি শুকনা মরিচ দিন।

  • খেয়াল রাখবেন, মরিচের বোটা যেন দুধে ডুবে থাকে।

  • বাটিটি ঢেকে সারা রাত রাখুন।

কেন কাজ করে?
শুকনা মরিচের বোটা এবং ত্বকে কিছু প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া থাকে, যেগুলো দুধে ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়া শুরু করতে সাহায্য করে।

চতুর্থ পদ্ধতি: ভিনেগার দিয়ে বীজ তৈরি

পদ্ধতি

  • হাফ কাপ দুধে ১ চা চামচ ভিনেগার দিন।

  • নাড়ানোর প্রয়োজন নেই।

  • ঢেকে রাখুন এবং সারা রাত অপেক্ষা করুন।

কেন কাজ করে?
ভিনেগারে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে এবং প্রাথমিকভাবে দুধকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।

বীজ তৈরি হয়ে গেলে কীভাবে ব্যবহার করবেন?

যে কোন একটি পদ্ধতিতে তৈরি হওয়া বীজ দই যদি ভালোভাবে জমে যায়, তাহলে সেটা থেকেই আপনি পরবর্তীতে মূল দই বানাতে পারবেন। সাধারণত, তৈরি হওয়া বীজের ১–২ চা চামচ পরিমাণ নতুন গরম দুধে মিশিয়ে ৬–৮ ঘণ্টা রেখে দিলেই এক বাটি ঘন, সুস্বাদু দই তৈরি হবে।

অতিরিক্ত টিপস

  • গরম দুধে বীজ দেওয়ার পর ঢেকে রাখতে হবে এবং স্থান যেন বেশি ঠান্ডা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

  • প্রথম বীজ যেটাই সফল হয়, সেটাই পরবর্তী সময়ে বারবার ব্যবহার করুন।

  • প্রতিবার দই জমানোর সময় একটি চামচ দই রেখে দিন, যাতে সেটা ভবিষ্যতে বীজ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।


দইয়ের বীজ তৈরি একেবারেই জটিল নয়, শুধু প্রয়োজন একটু ধৈর্য এবং সঠিক উপায় জানা। প্রাকৃতিকভাবে বীজ তৈরি করলে দই হয় অনেক বেশি ঘন, সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর। এই চারটি পদ্ধতি থেকে যেটি আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করে, সেটি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। ঘরের দই মানে স্বাস্থ্যকর, প্রিজারভেটিভ-মুক্ত খাবার – একদম নিজের হাতে তৈরি।


FAQ

১. দইয়ের বীজ না থাকলে দই বানানো কি সম্ভব?
হ্যাঁ, সম্ভব। উপরোক্ত চারটি প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরেই দইয়ের বীজ তৈরি করা যায়। একবার বীজ তৈরি হলে তা দিয়ে নিয়মিত দই বানানো যাবে।

২. কোন পদ্ধতিতে বীজ সবচেয়ে ভালো কাজ করে?
এটি নির্ভর করে পরিবেশ, দুধের মান এবং ব্যবহৃত উপাদানের উপর। তবে সাধারণত লেবুর রস এবং শুকনা মরিচ দিয়ে তৈরি বীজ তুলনামূলকভাবে দ্রুত এবং সফলভাবে জমে থাকে।

৩. দুধ বেশি গরম হলে কি হবে?
যদি দুধ খুব গরম থাকে, তাহলে বীজ দেওয়ার পর ছানা হয়ে যেতে পারে এবং দই জমবে না। তাই দুধ হালকা গরম থাকা জরুরি – আঙুল ডুবিয়ে সহ্য করা যায় এমন গরম।

৪. দইয়ের বীজ কতোদিন ব্যবহার করা যায়?
একবার দই জমে গেলে সেই দই থেকে বারবার বীজ নেওয়া যায়, যতক্ষণ না দইয়ের স্বাদ বা ঘনত্বে পরিবর্তন আসে। সাধারণত ২–৩ বার পর্যন্ত এক বীজ দিয়ে ভালো দই হয়।

৫. দইয়ের বীজ ফ্রিজে রাখা যাবে কি?
হ্যাঁ, আপনি চাইলে দইয়ের বীজ (অর্থাৎ সামান্য পরিমাণ দই) ফ্রিজে রেখে পরে ব্যবহার করতে পারেন। তবে খুব বেশি সময় রাখলে ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। সর্বোচ্চ ৫–৭ দিন ফ্রিজে রাখার পর ব্যবহার করুন।

৬. দই জমতে কত সময় লাগে?
সাধারণত ৬–৮ ঘণ্টা সময় লাগে দই জমতে। শীতকালে সময় একটু বেশি লাগতে পারে, তখন হালকা গরম কাপড়ে ঢেকে রাখা বা ওভেনের ভিতরে রাখা যেতে পারে।

৭. গরুর দুধে এই পদ্ধতিগুলো কি কাজ করবে?
হ্যাঁ, গরুর দুধ, প্যাকেটের দুধ বা গুঁড়া দুধ – সব ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতিগুলো কাজ করে। শুধু দুধটি যেন ভালোভাবে গরম এবং বিশুদ্ধ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

৮. প্রথম বারের দই যদি পাতলা হয় তাহলে কী করব?
প্রথমবারের দই একটু পাতলা হওয়াটা স্বাভাবিক। সেটা বীজ হিসেবে ব্যবহার করলে পরবর্তীবারের দই সাধারণত অনেক ভালো জমে। ধৈর্য ধরে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ব্যাচ পর্যন্ত চেষ্টা করুন।

Post a Comment

Previous Post Next Post