ডায়েট প্ল্যান (Diet Plan) কি? Diet Plan এর প্রকারভেদ ও গুরুত্ব? কেটো ডায়েট কি?

ডায়েট প্ল্যান (Diet Plan) কি? Diet Plan এর  প্রকারভেদ ও গুরুত্ব ? কেটো ডায়েট কি ?

ডায়েট প্ল্যান কি? Diet Plan? 

Diet Plan শব্দটা শোনার পর পরই আমাদের মাথায় যে কথাটা ঘুরপাক খায় তা হলো স্বল্প মেয়াদে কঠোর খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কিংবা খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এর ব্যাপকতা এর থেকেও বেশি। সুস্থ্য জীবন যাপনের লক্ষ্যে আমাদের খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস পরিবর্তন এবং ব্যায়াম ও অন্যান্য শারীরিক শ্রমের সাথে এর সমন্বয় সাধনই হলো ডায়েট প্ল্যান।

এই অভ্যাস পরিবর্তন ওজন কমানো, শারীরিক অসুস্থতা কমানো, শারীরিক শ্রমের সাথে সমন্বয় সহ নানা কারনে হতে পারে। তবে স্বল্পমেয়াদের তুলনায় দীর্ঘ মেয়াদে ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ আমাদের শরীরকে প্রয়োজনীয় সুস্থতা দিতে পারে। 

ডায়েট প্ল্যান (Diet Plan) কি? Diet Plan এর  প্রকারভেদ ও গুরুত্ব?


ডায়েট প্ল্যান এর প্রকারভেদ?  Types of Diet Plan? 

নানা প্রয়োজনীয়তার উপরে ভিত্তি করে আলাদা আলাদা রকমের Diet plan প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা আমাদের প্রয়োজন মোতাবেক এই খাদ্যাভ্যাসগুলো অনুসরণ করতে পারি। 

১. মেডিটেরিয়ান ডায়েট | Mediterranean Diet

সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং লম্বা সময় চালিয়ে যাওয়ার উপযোগী  Diet plan গুলোর একটি। এটি নানা রকমের শাক-সবজি, শীম জাতীয় খাবার, মাছ এর উপরে বেশি জোড় দিয়ে থাকে। একটিতে নির্দিষ্ট পরিমানে ডিম, মুরগী খাওয়ার কথা বলা হয় এবং এই ডায়েটে রেড মিট খেতে নিরুৎসাহিত করা হয়।

মেডিটেরানিয়ান ডায়েটে (Mediterranean Diet) বিভিন্ন ধরনের ফল, শাক-সবজি, বাদাম, তেল এসমস্ত কিছু দিয়েই তৈরি হয়। এই ডায়েটের অন্যতম উপাদান হিসেবে থাকে বিভিন্ন সামুদ্রিক খাবার এবং সামুদ্রিক নানারকমের মাছ। সপ্তাহে অন্তত দুইবার পোল্ট্রির মাংস, টক দই, ডিম এগুলোও থাকে ডায়েটে। আবার এই ডায়েটের মধ্যেই রয়েছে রেডমিট সমেত বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি। সমীক্ষায় আরও বলা হচ্ছে এই ডায়েট খাবারের কোয়ালিটির দিকে বেশি নজর দেয়। এই ডায়েটের মাধ্যমেই মানুষ পেয়ে যায় সেই সমস্ত খাবারগুলি যেগুলি রিসার্চের দ্বারা স্বাস্থ্যবিদরা মানুষকে খেতে বলেন।

বিভিন্ন রিসার্চে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে মেডিটেরানিয়ান ডায়েট (Mediterranean Diet) ক্রনিক রোগকে প্রতিহত করে। ডায়াবেটিস, হার্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় মেডিটেরানিয়ান ডায়েট (Mediterranean Diet) অনুসরণ করলে। একটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন এবং দীর্ঘ জীবন লাভ করা সম্ভব এই ডায়েটের (Mediterranean Diet) দ্বারা, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।

২. ভেজিটেরিয়ান / ভিগান ডায়েট| Vegan Diet

এটি এমন এক ধরনের খাদ্যাভ্যাস যেখানে কোনও প্রাণীজ খাবার খাওয়া হয় না। শুধু মাছ-মাংস, ডিম নয়। দুগ্ধজাতীয় সামগ্রীও এই ডায়েটে থাকে না। উৎস শুধুমাত্র উদ্ভিদ এমন খাবারই খাওয়া হয়ে থাকে।যদিও দুইটি Diet এর মাঝে কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে এদের ভিতরে মিলও আছে অনেক। দুইটি প্ল্যানই উদ্ভিজ্জ খাবার গ্রহণের উপরে জোড় দেয় এবং প্রাণীজ আমিষের উপরে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। ধর্মীয় অনুশাসন, প্রাণী অধিকার, স্বাস্থ্য নানা কারনে এই ডায়েট অনুসরণ করা হয়। 

৩. Low Carb Diet|লো কার্ব ডায়েট

এটি মুল লক্ষ্য কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিমান একদম কমিয়ে দেওয়া এবং তা অমিষ ও চর্বি দিয়ে পুর্ণ করা।ওজন কমানোর চেষ্টা করলে প্রথমেই সকলে ‘লো কার্ব’ ডায়েট করার পরামর্শ দেন। কিন্তু এই লো কার্ব ডায়েট আসলে কী, তা কেউ ঠিক করে বলে দেন না। ‘লো কার্ব’ মানে খাদ্যতালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম করা। যে খাবারে কার্বোহাইড্রেট বেশি, যেমন রুটি, ভাত, পরোটা, পাঁউরুটি, পাস্তা বা যে কোনও ময়দার জিনিস কম করে দিতে হবে রোজকার খাদ্যতালিকা থেকে। 

৪. ড্যাশ ডায়েট | Dash Diet

DASH - Dietary Approaches to Stop Hypertension. নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই ডায়েটের মুল লক্ষ্য হলো উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে নিয়ে আসা। DASH ডায়েট হল তাজা ফল, শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন, মটরশুটি, উদ্ভিজ্জ তেল, বাদাম খাওয়া এবং চিনি খাওয়া সীমিত করার উপর ভিত্তি করে একটি খাদ্যতালিকা তৈরি করে দেন বিশেষজ্ঞরা। ১৯৯৭ সালে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত DASH ট্রায়াল অনুসারে, এটি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে এমন প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সোরা উপায়। বেশিরভাগ মানুষ সাধারণত ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরণের ডায়েট চেষ্টা করেন, যার মধ্যে কিটো ডায়েট, ভেগান ডায়েট। আর এই Diet-গুলির মধ্যে একটি হল Dash Diet। এটি কেবল রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে না, ওজন হ্রাসেও কার্যকর।

৫. মাইন্ড ডায়েট | Mind Diet

মেডিটেরিয়ান ও DASH ডায়েটের সংমিশ্রণে তৈরি একটি Diet plan যার মুল লক্ষ্য হলো আমাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা ও সমন্বয়। জানেন কি মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতেও সঠিক ডায়েটের প্রয়োজন? মাইন্ড ডায়েট যেমন অ্যালঝাইমার’স বা পারকিনসন’স-এর মতো স্নায়ুর সমস্যা দূরে রাখে৷ তেমনই শরীরের মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে ওজন কমানো, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো ও কার্ডিও ভাসকুলার সমস্যা দূরে রাখতেও সাহায্য করে৷ রাশ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি সেন্টারের নিউট্রিশনাল এপিডেমিওলজিস্ট মার্থ ক্লেয়ার মরিস এই ডায়েটের প্রচলন করেন৷ কী কী খেতে হয় মাইন্ড ডায়েটে? সবুজ শাক-সব্জি, তাজা ফল, ডাল, বিনস, বাদাম, দানাশস্য, মাছ, পোলট্রির ডিম ও চিকেন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন নিউট্রিশনিস্টরা এই ডায়েটে৷ ঠিক তেমনই ডায়েট থেকে বাদ দিতে বলা হয় ভাজা, মাখন, চিজ, রেড মিট, চিনির মতো হাই ফ্যাট খাবার৷

৬. কিটো ডায়েট | Keto Diet

কিটো ডায়েট মুল লক্ষ্য কিটোসিস। আমাদের শরীর কার্বোহাইড্রেট এর পরিবর্তে ফ্যাটকে শক্তির উৎস হিসেবে গ্রহণ করলে কিটোসিস শুরু হয়। অধিক চর্বি জাতীয় খাদ্যগ্রহণ এবং স্বল্প কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ, দ্রুত ওজন কমানো এই ডায়েটের মুললক্ষ্য। 

৭. ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ডায়েট 

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ডায়েট প্ল্যানের মুল লক্ষ্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্যগ্রহণের অভ্যাস করা এবং সম্ভব হলে দিনের একটা বড় সময় কোনো খাবার না খেয়ে থাকা। এটি ওজন কমানো এবং শরীরের মেটাবলিজম ঠিক করতে অনুসরণ করা হয় । 

৮. কার্নিভর ডায়েট । Carnivore Diet  

এই ডায়েটের মুল ভিত্তিই হলো প্রাণীজ আমীষ। শর্করা, উদ্ভিজ্জ যে কোনো খাবার এই ডায়েটে নিষিদ্ধ।কার্নিভর ডায়েট বা Carnivore Diet হলো এমন একটি নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস যার মূল লক্ষ্য শুধুমাত্র প্রাণীজ খাবার গ্রহণ করা এবং কোনও প্রকারের শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণ না করা। এই ধরনের ডায়েটে মাখন, পনিরের ব্যতীত ল্যাকটোজ সমৃদ্ধ দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণকেও নিরুৎসাহিত করা হয়।

মূলত মানব জাতির প্রাক্কালে মানুষ মাংস জাতীয় খাবার খেয়েই বেচে থাকতো, টিকে ছিল এবং শর্করা জাতীয় খাদ্যই আমাদের শারীরিক সকল সমস্যার মূল, এই ধরনের একটি বিতর্কিত ধারণা থেকে এই ডায়েটের প্রচলন হয়। 

এমনটা দাবি করা হয় যে, এই ডায়েট প্ল্যান এর অনুসারীগণ নানা রকমের সমস্যা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পেরেছেন, যার ভিতরে আছে হতাশা, অবসাদ, দুশ্চিন্তা, ডায়েবেটিকস (diabetics) এবং আর্থাইটিস (arthritis). তবে এই ব্যাপারে কোনও নিয়ন্ত্রিত পরিসংখ্যান এবং গবেষণা করা সম্ভব হয়নি, তাই এই দাবির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। 

এছাড়াও ভ্লিউমেট্রিক ডায়েট, লায়ন ডায়েট, ইওগার্ট ডায়েট, ফ্লেক্সিটেরিয়ান ডায়েট, মায়ো ক্লিনিক ডায়েট, এটকিনস ডায়েট, ডব্লিউ-ডব্লিউ, পালেও ডায়েট সহ শতাধিক নানা রকমে ডায়েট প্ল্যান রয়েছে।


ডায়েট প্ল্যানের গুরুত্বঃ

সুস্থ্য জীবন-যাপনের মূল ভিত্তি হলো ভারসাম্য। এজন্য আমাদের খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন আর আমাদের পুষ্টি গ্রহণে ভারসাম্য ঠিক রাখা উচিত। 

আমাদের শরীরের প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক পুষ্টি।  তাই আমাদের অবশ্যই নানা রকমের খাবার গ্রহণ করতে হবে যা পুষ্টিতে সমৃদ্ধ যেমনঃ তাজা ফল, শাক-সবজি, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। নানা রকম খাবার গ্রহণের কারণ সব খাবারে সব রকমের পুষ্টি উপাদান থাকে না। আলাদা আলাদা খাবার আমাদের বিভিন্ন রকমের ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করতে পারে। 

আমাদের খাদ্যাভ্যাস আমাদের মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা, শারীরিক সুস্থতা, ঘুম, মেজাজ-মর্জি ইত্যাদির উপরে প্রভাব ফেলে। খাবার গ্রহণে অনিয়ম হলে আমাদের প্রতিদিনের জীবনেই এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে।

প্রচলিত Diet প্ল্যানের সীমাবদ্ধতাঃ 

ডায়েট প্ল্যানগুলো একটা প্রয়োজন থেকে তৈরি। একটি হয়ত কারো উপরে খুব ভালো কাজ করছে অন্যটি হয়ত অণ্য আরেক জনের উপরে। 

বেশ কিছু ডায়েট প্ল্যান আছে যা কিছু রোগে আক্রান্তদের করা উচিত না। যেমনঃ কার্নিভর ডায়েট কিডনি রোগীদের অনুপযোগী। 

বেশ কিছু Diet plan খুবই ব্যয়বহুল 

লম্বা সময় চালিয়ে যাওয়া যাবে এমন ডায়েট প্ল্যানের কিছুট অভাব রয়েছে

অনেক ক্ষেত্রেই এই খাদ্যাভাসগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু অনেক সময় অভ্যাসে  কিছুটা ব্যতীক্রম ও পরিবর্তন করা প্রয়োজন পড়তেই পারে। 

যাদের জন্য ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করা উচিতঃ 

এর উত্তর হলো সবারই। কিন্তু সব Diet সবার জন্য না, আবার প্রচলিত প্ল্যানগুলো মানতে হবে এমনও না। চাইলে নিজের মতো করে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসা যায়।

ভুল খাবার নির্বাচন অনেক সময় যে কোনো ডায়েট প্ল্যানকেই অকার্যকর করে দিতে পারে, তাই খাবার নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। ওজন কমানো, সুসস্থ্য থাকা, শরীরকে পেশীবহুল করা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে। আমাদের পন্থা আলাদা হতে পারে, কিন্তু লক্ষ্য হবে এক ও অভিন্ন আর তা হলো শরীরকে সুস্থ্য রাখা।



কেটো ডায়েটে খাবার এর ধরন ?

Keto Diet: আজকাল ওজন কমানোর (Weight Loss) জন্য অনেকেই কেটো ডায়েট(Keto Diet) করে থাকেন। এর মাধ্যমে দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব। কিন্তু সেক্ষেত্রে শুধু কেটো ডায়েট মেনে চললেই হবে না। বেশ কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। কেটো ডায়েটে তখনই আপনি সফল হতে পারবেন, অর্থাৎ মেদ ঝরবে। তাহল চলুন নেওয়া যাক কেটো ডায়েট আসলে কী এবং এই ডায়েটের সময় কোন কোন নিয়ম মেনে সফল হবেন আপনি।

Keto Diet|কেটো ডায়েট কী? 

কেটো ডায়েট হল কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার। অর্থাৎ আপনার ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয় এই বিশেষ ধরনের ডায়েটে। মূলত কেটো ডায়েটের ক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে তার পরিবর্তে হেলদি ফ্যাট রাখা হয়।

কিটো ডায়েট কি ও যেভাবে করবেন !

নানারকম ডায়েটের মধ্য থেকে অনেকেই কিটো ডায়েটকে বেছে নিচ্ছেন। কিটো ডায়েট করে নিজের আমূল পরিবর্তন করেছেন বলে জানাচ্ছেন অনেকেই।

কিটো ডায়েটে মূলত কার্বোহাইড্রেটকে এড়িয়ে চলা হয়। কিটো ডায়েটের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কার্বোহাইড্রেটকে পুড়িয়ে ফেলা। চর্বি পোড়ানো শেষ হয়ে গেলে শরীর জমানো কার্বোহাইড্রেট পোড়ানো শুরু করে, ফলে ওজন কমে যায়।

আমাদের শরীরের প্রধান খাদ্য বা জ্বালানি হলো গ্লুকোজ। কিটো ডায়েটের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে গ্লুকোজের বদলে কিটোন বডিগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা।

কিটো ডায়েট হল সুপার লো-কার্ব ডায়েট। এই ডায়েটে কার্ব এক্সট্রিম লেভেলে কম থাকবে আর ফ্যাট অনেক হাই থাকবে আর প্রোটিন মিড লেভেলে থাকবে। টিপিক্যাল কিটোজেনিক ডায়েটে টোটাল ক্যালোরিক নিডের কার্ব ৫%, প্রোটিন ২৫% আর ফ্যাট থাকে ৭০%।

মানে আপনি সারাদিন যতটা খাবার খাবেন তার মধ্যে খাবারের পার্সেন্টেজ এমন হবে। আমাদের নরমাল ডায়েটে ৫০% কার্বোহাইড্রেট থাকে, ২০%প্রোটিন আর ৩০%ফ্যাট থাকে। ধরা যাক আপনি ১২০০ ক্যালরি খাবেন সারাদিনে। তার ৫০% কার্ব মানে আপনাকে ৬০০ক্যালরির কার্ব খেতে হবে।

কিটো ডায়েট অনেক ইফেক্টিভ ফ্যাট লস ডায়েট। কিটো ডায়েটে মেইনলি প্রোটিন খাওয়াই মূল উদ্দেশ্য। তবে শুধুমাত্র প্রোটিন থেকে ডেইলি ক্যালরি রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করা ফলে টোটাল ক্যালরি নিডের মাত্র ২০-৩০% প্রোটিন আর ৫% কার্ব বাকিটা ফ্যাট দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে হবে।

কিটো ডায়েট কত প্রকার? Type of Keto Diet

  • ১. স্ট্যান্ডার্ড কিটোজনিক ডায়েট: এটাতে কার্ব ৫%, প্রোটিন ২৫ % আর ফ্যাট ৭০% থাকে।
  • ২. সাইক্লিক্যাল কিটোজনিক ডায়েট: এই কিটো তে সপ্তাহে দুদিন হাই কার্ব খাওয়া যায়।
  • ৩. টার্গেটেড কিটোজনিক ডায়েট: এই কিটোতে ওয়ার্ক আউটের আগে বা পরে কার্ব খেতে পাওয়া যায়।
  • ৪. হাই প্রোটিন কিটো ডায়েট: এটা অনেকটা স্ট্যান্ডার্ড কিটো ডায়েটের মতোই, শুধু প্রোটিন ২৫% থেকে বেড়ে ৩৫% হয়ে যায়। এটাতে ফ্যাট ৬০%, প্রোটিন ৩৫% আর ফ্যাট ৫%. বডি বিল্ডার বা এথেলেট রা এটা করে থাকে।

কিটো ডায়েট যেসব খাবার নিষেধ !

  • চিনি বা মিষ্টিজাতীয় কোনো কিছু একদম বাদ। কোক, ফলের জুস, কেক, আইসক্রীম, চকলেট, স্মুদি, যেকোনো ধরনের মিষ্টি।
  • আটার তৈরি কোনো কিছু, ভাত, পাস্তা, নুডলস, ওটস, কর্ন ফ্লেক্স সব বাদ।
  •  সব ধরনের ফল নিষেধ।
  •  সব ধরনের ডাল নিষেধ, ডালে প্রোটিনের পাশাপাশি ভালো পরিমাণ কার্ব থাকে।
  •  মাটির নিচে হয় এমন সব সবজি যেমন: আলু, মুলা, গাজর, কচু সব বাদ।
  •  যে কোনো ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার একদম বাদ।


কিটো ডায়েট কি কি খাবার থাকে !

  1. মাংস: গরু, মুরগি
  2. সব ধরনের মাছ
  3. ডিম
  4. বাটার
  5. বাদাম
  6. হেলদি ওয়েল– যেমন অলিভ ওয়েল, কোকনাট ওয়েল, ক্যানলা ওয়েল
  7. ঘি
  8. সবুজ যে কোনো সবজি, পালং, ব্রকলি, বাঁধাকপি এসব।
  9. মোটামুটি সবধরনের মশলা।


কিটো ডায়েট উপকারিতা !

অল্প সময়ে প্রচুর ফ্যাট কমানো যায়।

ফ্যাট আর প্রোটিন খাবেন তাই পেট খালি থাকবে না।

শরীরে পেশীর পরিমাণ কমবে না কিন্তু মেদ কমে যাবে।

অনেক বেশি প্রোটিন থাকাতে সহজে ক্ষুধা লাগবে না। আপনি সহজে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন।

এক গবেষণাতে দেখা গেছে, কিটো ডায়েট করা মানুষ টিপিক্যাল লো-ফ্যাট ক্যালরি রেস্টিক্টেড ডায়েটের চেয়ে ২.২ গুণ বেশি ওজন কমিয়েছে।

কিটো ডায়েট হার্ট ডিজিজ, ব্লাড প্রেশার, ব্লাড সুগারের রিস্ক কমায়।

পিসিওএস রোগীদের জন্য ইফেক্টিভ ডায়েট।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক ইফেক্টিভ একটা ডায়েট, শুধু ওজন কমানো না ব্লাড সুগার আর ইনসুলিন লেভেল নিয়ন্ত্রণে আনে।

ভেজিটেরিয়ানদের জন্য কিটো ডায়েট বেশ কষ্টকর ব্যাপার হবে। কারণ, কিটো ডায়েটে প্রোটিন খুব কম পরিমাণে গ্রহণ করতে হলেও শাক-সবজি থেকে সেই প্রোটিন পাওয়াটা খুব কঠিন ব্যাপার। এছাড়া, সবজিতে প্রোটিনের সঙ্গে সঙ্গে শর্করাও থাকে যা ডায়েটে বিঘ্ন তৈরি করতে পারে।

কিটো ডায়েট মানেই প্রচুর পরিমাণ মাংস গ্রহণ এমন নয়। কিটো ডায়েটের ক্ষেত্রে ক্যালোরির উৎসকে মোট তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। ৭৫ শতাংশ ফ্যাট, ২০ শতাংশ প্রোটিন এবং ৫ শতাংশ কার্ব- মোট মিলিয়ে এভাবেই কিটো ডায়েট সাজানো হয় 

সাধারণ মানুষদেরকে যারা ওজন কমাতে চান তাদের ‘স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েট’ দেওয়া হয়।

বিশেষ ব্যক্তিদের যাদের স্বাস্থ্যে দ্রুত পরিবর্তন আনতে হয় যেমন- বডিবিল্ডার, খেলোয়ার, তারকাদের ‘হাইপ্রোটিন কিটোজেন ডায়েট’য়ে পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানান এই পুষ্টিবিদ।

কিটো ডায়েট খাবার তালিকা !

কিটোডায়েট চলাকালীন যা খাওয়া যাবে- সপ্তাহে দুদিন মুরগির মাংস, চর্বিহীন গরুর মাংস, মাছ, সামদ্রিক মাছ, ডিম, মাখন ঘি, পনির।

স্বাস্থ্যকর তেল যেমন- জলপাইয়ের তেল, নারিকেল তেল, সরিষার তেল ইত্যাদি। তবে কোনোভাবেই সয়াবিন তেল খাওয়া ঠিক হবে না।

কিটো ডায়েট চলাকালীন যা খাওয়া যাবে না- চিনি, মিষ্টি, মিষ্টি-জাতীয় খাবার, ফলের জুস, ডাল ও ডাল-জাতীয় খাবার, মাটির নিচে হয় এমন খাবার- আলু, মিষ্টি আলু, আটা ও আটার তৈরি খাবার, ভাত, পাস্তা, ওটস, নুডুলস, কর্নফ্লেক্স ইত্যাদি।

কিটো ডায়েটের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি কি !

এই ডায়েটের বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে বলে জানান এই পুষ্টিবিদ।

এতে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকায় অনেকের ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, কিডনিতে পাথর, হৃদরোগ, পিত্তথলিতে পাথর, থায়রয়েডের সমস্যা, চুল পড়ার সমস্যা, হজম ক্ষমতা কমা, ত্বকের নানাবিধ সমস্যা, উজ্জ্বলতা হ্রাস, শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা দেয়।

একজন পুষ্টিবিদ হিসেবে আজিজুন নাহার মনে করেন, “এটা মূলত উচ্চবিত্তদের জন্য প্রযোজ্য এবং যারা খেলোয়ার, জিম্নাস্টিক, বডিবিল্ডার বা তারকা যাদের বিশেষ প্রয়োজনে শরীর ও ওজনে পরিবর্তন আনতে হয় তারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই ডায়েট করতে পারেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ যারা আছেন তাদের ওজন কমানোর জন্য কিটো ডায়েট করার কোনো প্রয়োজন নেই।”

কিটোজেনিক ডায়েট শরীরের কেবল ওজনই কমায় না বরং সামান্য ভুলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।

তাই সাধারণ খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন, নিয়মিত শরীরচর্চা করা, হাঁটা চলা, ঘরের কাজ নিজে করা, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দৌঁড়ানো, উঠবস করা, খাবার থেকে মিষ্টি ও চিনি বাদ দেওয়া, কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণের পরিমাণ খানিকটা কমানো ইত্যাদি করে সচেতন যে কোনো ব্যক্তিই ছয়মাস বা এক বছরের মধ্যে ওজনে পরিবর্তন আনতে পারেন।

তার মতে, “খাবারের সব উপাদানই শরীরে প্রয়োজন। তবে তা অবশ্যই পরিমিত। দীর্ঘ সময় ধরে এসব খাবারের ঘাটতি শরীরে ক্ষতি সাধন করে।”

তবে কেউ যদি বাড়তি ওজন কমাতে চান তাহলে তাকে অবশ্যই কোনো অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের সহায়তা ও পরামর্শ অনুযায়ী এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পুষ্টিবিদের তত্ত্বাবধানে থেকে কিটো ডায়েট করতে পারেন।

কিশোর-কিশোরিদের মধ্যে ওজন কমানোর একটা ভয়ানক প্রবণতা দেখা দেয় এবং তারা না খেয়ে বা কিটো ডায়েট করে ওজন কমাতে চান।

তাদেরকে উদ্দেশ্য এই পুষ্টিবিদ বলেন, “হুজুগে বা নিজে নিজে পরিকল্পনা করে কিটো ডায়েট করা ক্ষতিকারক। এর চেয়ে বরং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, হালকা ব্যায়াম, হাঁটা চলার অভ্যাস গড়ে তোলা, পানি পান, সঠিক ঘুমচক্র মেনে চলে ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীর সার্বিকভাবে সুস্থ রাখা সম্ভব।”

তাছাড়া তরুণ বয়সে শরীরে চর্বি খুব একটা জমাট বেঁধে থাকে না। তাই একটু চেষ্টা করলেই বাড়তি চর্বি কমানো যায়। এরজন্য কিটো ডায়েট করার প্রয়োজন নেই বলে জানান তিনি।

1 Comments

  1. অনেক সুন্দর হয়েছে

    ReplyDelete
Previous Post Next Post